ভ্যালেন্টাইন ডে ও মহাশিবরাত্রি
আজকের দিনটা যাকে বলে ষোল আনা প্রেমের দিন।ভালোবাসার নিশা। পরিণয়ের রাত্রি। মহাশিবরাত্রি।হরগৌরীর মহামিলনের রাত। এইদিন গৌরী শিবের গলায় মালা পরিয়ে বলেছিলেনঃ এ রাত তোমার আমার। অন্যদিকে ভ্যালেনটাইনডে।আত্মত্যাগের দিন।অনুরাগের ছোঁয়ায় শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা।একদিকে পথের প্রান্তে ফুটে ওঠা আকন্দফুলের স্নিগ্ধতা।অন্যদিকে গোলাপের রক্তিমতা।
পুরাণ মতে আজকের রাতে শিবপার্বতীর বিয়ে হয়েছিল ঘটা করে।আবার কেউ বলেন শিব আজকে ধরাধামে লিঙ্গরূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।তাইতো প্রণয়ের রাত, পরিণয়য়ের রাত এই মহাশিবরাত্রি। আজও ভারতের আদর্শ দম্পতির প্রতীক হর-গৌরী।সেই কারণে হিন্দু রমণীরা আজকের রাতে চারপ্রহরে চার বার লিঙ্গরূপী শিবের মাথায় জল ঢালেন।শিব শুধু নটরাজ নন,তিনি প্রেমের দেবতা।
অন্যদিকে এই চোদ্দই ফেব্রুয়ারি আবার ভ্যালেন্টাইন্স ডে।বসন্ত সমাগত।গাছে গাছে কচি কিশলয়।ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল।কোকিল কুহুতানে ডাকছে।মনের বনে জেগেছে বাউল বাতাসের খ্যাপামি।আজতো চুপি চুপি তাকে বলতে বড্ড ইচ্ছে করে --"ভালোবেসে সখি নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে"।
তার্কিকরা বলবেন সেকি! ভালোবাসার আবার দিন ক্ষণ আছে নাকি! আরে বাবা-- প্রতীকী বলেতো একটা কথা আছে! ভ্যালেন্টাইন সেই প্রতীক মাত্র। প্রেমেপড়ার দিন।গল্পটা সবার জানা।রোমসম্রাট ক্লদিয়াস টু।সাম্রাজ্যরক্ষা তাঁর বড় দায়।যত বড় শক্তিশালী সৈনিক হোক না কেন।নারীর এক কটাক্ষেইতো সে কুপোকাত! সম্রাট তা বিলক্ষণ জানেন।সেই জন্যই দিলেন আইন জারি করে রোমসাম্রাজ্যে সৈনিকরা বিয়ে করেছো কি ঘ্যাচাং!
এদিকে যাজক ভ্যালেন্টাইন রাজার আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গোপনে বিয়ে দিতে লাগলেন সৈনিকদের।রাজার কাছে খবর গেল।হুকুম দিলেন পাকড়াও উসকো।দিলেন জেলে পুরে।বললেন--অপরাধ স্বীকার কর।প্রাণে বাঁচবে।ভ্যালেন্টাইন প্রেমের শক্তিতে বলীয়ান। রাজাজ্ঞাকে করলেন থোড়াই কেয়ার।১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনকে হত্যা করা হলো।তিনি হয়ে উঠলেন কালক্রমে প্রেমের দেবতা--অখণ্ড ধরনীতে।
সুতরাং আজ এই প্রেমের দিনে সকাল থেকেই শুরু হবে মনের বনে লুকোচুরি।প্রেমের উছ্বাস।গোলাপের সৌরভ। এলোমেলো দখিনা বাতাসের দাপাদাপি।মন দেওয়া নেওয়া।চাই কি চোখের ইশারাতেই বিশ্বজয়! উন্মোচিত হবে নব যৌবনের কিশলয়।আমাদের পৌঢ় হৃদয় আকাশে দেখা দেবে হঠাত আলোর ঝলকানি।কারু কারু জেগে উঠবে ধুলো পড়া স্মৃতির চরাভূমি।কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!
কিন্তু সবুজ মনের অবুঝ প্রেমকে চিরকাল শাসন করেই এসেছে শক্তিশালীরা। অধিকাংশ পরকীয়া রতি মানেই রক্তারক্তি। হত্যা প্রতিহত্যা।আজও সংবাদমাধ্যমে পরকীয়া প্রেমের আঘাতের ছবি দেখি।কিন্তু পরকীয়াতেই প্রেম পায় এক প্রচণ্ড শক্তি।একরোখা,উদ্দাম।সে হয়তো মরণের মধ্য দিয়েই জয়লাভ করে ।সমাজ চায় আমাদের প্রেম হোক স্বকীয়া। এখানেই চিরন্তন দ্বন্দ্ব।রাধাকৃষ্ণর প্রেম অবৈধ হলেও তাদেরও শাস্ত্র মতে বিবাহ হয়েছে। সেখানে সমাজের দায় বেশি।অবৈধ প্রেম বৈধতা পেয়েছে পরিণয়ের মধ্য দিয়ে।গর্গপুরাণেই রাধাকৃষ্ণের বিয়ের বিশদ বর্ণনা রয়েছে।
এক হিসাবে ভ্যালেন্টাইনডে কিন্তু বৈধপ্রেমেরই দিন। যাজক ভ্যালেন্টাইন নর-নারীর প্রেমকেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন বিবাহের মাধ্যমে।সুতরাং ভ্যালেনটাইন ডে নিয়ে গেল গেল করার কিছু নেই।তিনিও অবৈধ প্রেমকে বৈধ করার জন্যই শহীদ হয়েছিলেন। আর এখানেই মিলে যায় দিন আর রাত্রি।ভ্যালেন্টাইন আর শিব।ভ্যালেনটাইন ডে আর মহাশিবরাত্রি ।
No comments:
Post a Comment