Thursday, December 14, 2017

GHORA MUKHI SINGHO O GHOTOK BAHONA DEBI

   দুর্গার বাহন ঘোড়ামুখি সিংহ ও রাঢ়ের ঘোটক বাহনা দেবী




         
দেবী দুর্গা দুর্গতি নাশিনী মহিষাসুর মর্দিনী সিংহবাহিনী। দেবীপুরাণ অনুসারে   সিংহের গ্রিবায় বিষ্ণু, শিরে মহাদেব, ললাটে পার্বতী, বক্ষস্থলে দুর্গা প্রভৃতি নানা দেবতার শক্তি বিন্যস্ত হয়েছে।সিংহ এমনিতেই পশুরাজ।যুদ্ধদেবী দুর্গার প্রকৃত বাহন। কিন্তু বনেদি বাড়ির দুর্গা বা প্রাচীন অষ্টধাতুর মূর্তি কিম্বা টেরাকোটা মন্দিরফলকে দুর্গার বাহন সিংহ ঠিক প্রাকৃত নয়, খানিকটা ঘোড়ার মত দেখতে।অনেকেই ঘোড়ামুখি বা ঘোড়াদাবা সিংহ বলেন। বলা যেতে পারে সিংহ ও ঘোড়ার মিশ্রণে অদ্ভুত এক পৌরাণিক জীব। বিষয়টি নিয়ে নানা কোণিক আলোচনা হলেও সন্তোষযোগ্য সমাধানে  এখনো  আসা যায়নি।ক্ষেত্রসমীক্ষার  সূত্রে আহৃত বেশ কিছু নতুন তথ্য  সম্পর্কে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।



  হরপ্পার প্রত্নতত্ত্বে ঘোড়ার অস্তিত্ব আজও আবিস্কৃত হয় নি।ঐতিহাসিকদের মতে  হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসের অন্যতম কারণ ঘোড়ায় চড়া যোদ্ধা  বহিরাগত আর্যদের লাগাতার আক্রমণ।বৈদিক সাহিত্যে গরু বলদের প্রসঙ্গ যতই থাক  মুনি ঋষিরা অশ্বের জয়গানে মুখোরিত।একা ঋকবেদেই অশ্ব উল্লেখিত হয়েছে ২১৫ বার।ইন্দ্রের  বাহন ঐরাবতের সঙ্গে উচ্চৈঃশ্রবা নামক অশ্ব।বায়ুর অশ্বের নাম নিষুৎ।কল্কি অবতারতো অশ্ববাহন যোদ্ধামূর্তি।এমনকি কৈলাস থেকে দেবী দুর্গা যখন মর্ত্যে আসেন তখন তাঁর যানবাহন নির্ধারিত হয়েছে চারটি যথা অশ্ব  গজ নৌকা ও দোলা। রাজারাজরাদের  অশ্বমেধের যজ্ঞের কথা না হয় বাদই দেওয়া হলো। অগণিত লোকদেবদেবীর  প্রধান ছলন বলতে এই ঘোড়া।  সুতরাং  মনে হতে পারে হয়তো ঘোড়ার এই  সার্বিক প্রাধান্য হেতু শিল্পীর চোখে  দেবী দুর্গার বাহন  সিংহের রূপ কল্পনায়  ঘোড়ার প্রভাব পড়েছে। ফলত, এমন বকচ্ছপ সিংহ দুর্গার বাহন রূপে ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করেছে।



 কিন্তু এটি কষ্ট কল্পিত ব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।প্রকৃতপক্ষে দেবী দুর্গার পরিচয় যুদ্ধ দেবী।আর প্রাচীনকাল থেকেই ঘোড়ায় চড়া এক ধরনের যুদ্ধদেবীর অস্তিত্ব দেখা গেছে রাঢ়ের  বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত মূর্তিফলকে।মঙ্গলকোট থেকে পাওয়া গেছে চতুর্ভূজা ঘোটকাবাহনা রণরঙ্গিনী দেবী।সময়কাল নির্ণিত হয়েছে কুষাণযুগ।বাঁকুড়ার সোনামুখীর স্বর্ণময়ী দেবী ঘোটকাবাহনা।বর্ধমান জেলার বেশ কিছু গ্রামে পূজিত হচ্ছে এই ধরনের  ঘোটকবাহনা দেবী। এগুলিকে কেউ দুর্গা বলে দাবী না করলেও  তাঁরা যে যুদ্ধদেবী ছিলেন  তাঁদের আয়ূধ দেখলেই বোঝা যায়।ক্ষেত্রসমীক্ষাসূত্রে প্রাপ্ত এমন কয়েকটি ঘোটকবাহনা যুদ্ধেদেবীর সবিস্তার আলোচনা সূত্রে  অবশ্যই বলা যেতে পারে রাঢ় অঞ্চলে সুপ্রাচীন কাল থেকে ঘোড়ায় চড়া এক যুদ্ধদেবী পূজিত হতো।পরবর্তীকালে সিংহবাহনা  দুর্গার পুজো প্রচলিত হলে  শিল্পীরা পূর্বতন  ঘোড়া ও দুর্গার  সিংহকে মিশিয়ে এমন এক অদ্ভূত বাহন করেছিলেন যারা নাম ঘোড়া দাবা বা ঘোড়ামুখি সিংহ।




No comments:

Post a Comment

PROTNO-SAMRAT

https://thekoulal.wordpress.com কৌলাল ওয়েবসাইটেও পড়তে পারেন।আর দেখতে পারেন মনের মতো ছবি।                                              ...