প্রত্ন-পীঠ মঙ্গলকোট
প্রত্নতীর্থ মঙ্গলকোট।দেবভূমি মঙ্গলকোট।হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন-সুফি-ইসলাম-লোকায়ত ধর্মের মিলনক্ষেত্র উজানি মঙ্গলকোট।সেই সুদূর প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে মৌর্য-শুঙ্গ-কুষাণ-গুপ্ত-পাল-সেনপর্ব থেকে মধ্যযুগ হয়ে একেবারে হাল আমলেও মঙ্গলকোট আছে সেই মঙ্গলকোটেই।আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ইতিকথার বাঁধন। জড়িয়ে আছে কিংবদন্তির রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ কাহিনি।তাঁর সঙ্গে অষ্টাদশ আউলিয়ার সংগ্রাম ও পরাজয়ের এক বেদনা-বিধুর আলেখ্য। ছড়িয়ে আছে চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের ধনপতি শ্রীমন্ত সদাগর লহনা খুল্লনা আর মা মঙ্গলচন্ডীকে নিয়ে ইতিউতি স্মৃতি গাথা। মৌন হয়ে আছে অজয় কুনুর নদির তীরে একদা মোঘল-পাঠানদের যুদ্ধ-কথা,মোঘলসম্রাট শাজাহানের সংগে সুফিসাধক হামিদ বাঙ্গালীর জ্ঞান-গর্ভ বাতচিত,সুলতান হোসেন শাহার বিলীয়মান কীর্তি...সবমিলিয়ে বাঙ্লার ইতিহাস তথা সংস্কৃতিতে মঙ্গলকোট এক জমজমাট অধ্যায়।
অথচ সংবাদপত্রের পাতায় বা টিভির স্ক্রিনে মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে --- রাজনৈতিক হানাহানিতে মত্ত মঙ্গলকোটের ঘোর অমঙ্গলের সংবাদ।নিজেদের মধ্যে দলাদলি হানাহানি খুনোখুনির জঘ্ন্ন খবর। সেখানে মঙ্গলশঙ্খ নিনাদের পরিবর্তে গোলাগুলি ছোঁড়ার হাড়হিম সংবাদ। এদিকে মঙ্গলকোট শুধু বাংলা বা ভারতবর্ষ নয়,সমগ্র বিশ্বের প্রত্নমানচিত্রে এক উজ্জ্বল নাম।সেই সিন্ধুসভ্যতা উত্তর তাম্রাশ্মীয় যুগ থেকে আজ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন জনবসতির অস্তিত্ব বর্তমান মঙ্গলকোটে...ছয় বর্গ কিমি প্রসারিত এমন প্রত্নক্ষেত্র বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্তের অধিকারী। এই সংবাদের খবর রাখে ক-জন!
গোটা গ্রামটিকেই বলা যেতে পারে প্রত্নডাঙার উপর বসানো। গ্রামে রাস্তা তৈরি করার সময় মূল ডাঙা বিচ্ছিন্ন হয়ে একাধিক ডাঙায় পরিণত। সুতরাং মঙ্গলকোট মানেই প্রত্ন-রত্ন প্রসবিনী খনি।সামান্য মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসে মাটির তৈরি প্রত্নসুন্দরীর মুখমন্ডল,মাটির পুতুল টেরাকোটা মূর্তি, ছাঁচে ঢালা তাম্রমুদ্রা, নানা ধরনের সিল ,সিলমোহর, পুঁতি, খেলনা আর বিভিন্ন যুগের ভাঙাচোরা তৈজসপত্রাদি। হাতবদল হয়ে দেদার পুরা সম্পদ হয়ে যাচ্ছে পাচার।কুনুর নদির গর্ভ থেকে মিলেছে একাধিক প্রস্তরমূর্তি যেমন কুষাণ পর্বের গণধরমূর্তি,পাল সেন আমলের একাধিক ত্রিবিক্রম বিষ্ণুবিগ্রহ,মহিষমর্দিনী দুর্গা ইত্যাদি।এগুলির অধিকাংশ সংরক্ষিত আছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিয়ামে। প্রত্নডাঙাগুলির উপর যত্র-তত্র অপরিকল্পিত বসতি গড়ে উঠছে বা উঠছে।প্রশাসনের এ বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই।নেই ইতিহাস আর ঐতিয্যকে বাঁচানোর জন্য সংগঠিত আন্দোলন।অথচ যথাযথ সরকারি পরিকল্পনা থাকলে শুধুমাত্র মঙ্গলকোটের ইতিহাস আর পুরাকীর্তি নিয়ে খুলে যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পের এক নয়া দিগন্ত। গতানুগতিক গ্রাম্য অর্থনীতিতে আসতে পারে পরিবর্তন।মুছে যাবে বাঙালীর ইতিহাস বিমুখতার অপবাদ। আমরা কবে ভাববো এসব কথা!
মঙ্গলকোট কুনুর নদির অববাহিকায় অবস্থিত।উজানি কোগ্রামের কাছে কুনুর অজয় নদির সঙ্গম---যা মঙ্গলকাব্যে ভ্রমরার দহ নামে বিখ্যাত।এখানকার বণিকরা অজয় কুনুর আর গঙ্গাপথ ধরে সমুদ্র বাণিজ্যযাত্রা করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চুড়ায় উঠেছিল।মঙ্গলকাব্যে যার প্রমাণ রয়েছে। মঙ্গলকোটে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে প্রাপ্ত পুরাসম্পদও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাক্ষ্য দেয় । অনেকেই বলেন মঙ্গলকোটের নামকরণ নাকি মোঘলদের অনুষঙ্গে।একেবারে ভ্রান্ত ধারনা।মঙ্গলকোটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে উজানির দেবী মঙ্গলচণ্ডীর নাম।বৃহদ্ধর্মপুরাণে বলা হয়েছে উজ্জয়নি বা উজানিপুরের মঙ্গলকোষ্ঠপীঠে দেবী মঙ্গলচণ্ডীর অবস্থান।
উজ্জয়িন্যাং যথাপূর্ব্যাং পীঠং মঙ্গলকোষ্টকম।
শুভা মন্ডলচন্ডাখ্যা যত্রাহং বরদায়িনী।।১,০১,১৪
নানাভাবে আবিস্কৃত মঙ্গলকোটের পুরাসম্পদগুলি শৌখিন পুরাসংগ্রাহক বা ক্ষেত্রসমীক্ষকরা অনেকদিন আগে থেকে সংগ্রহ করে চলেছেন।এককড়ি দাস ,প্রয়াত কেশবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়,মুহম্মদ আয়ুব হোসেন আসরাফ আলি প্রমুখদের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ্য।এদের সংগৃহীত পুরাসম্পদ রাজ্যপ্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহালয়ে ,কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগারে কিম্বা ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে।পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগ কতৃর্ক অধ্যাপক অমিতা রায় ও অধ্যাপক সমীর কুমার মুখোপাধ্যায়ের যৌথ নেতৃত্বে ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মঙ্গলকোটের বিক্রমাদিত্যের ডাঙা,মনুমিঞার ডাঙা ও কাছারি ডাঙা উৎখনিত হয়।এর ফলে খ্রিষ্ট পূর্ব ১২০০ শতক থেকে খ্রিষ্টীয় ১৮০০ শতক পর্যন্ত মোট তিন হাজার বছরের বর্ণময় বঙ্গসভ্যতার ধারাবাহিক প্রত্ন নিদর্শন আবিস্কৃত হয়।
হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা প্রাক-বৈদিক।সিন্ধু নদের উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল এই নাগরিক সভ্যতাটি। পাথরের সঙ্গে তামার ব্যবহার ফলে প্রাগৈতিহাসিক জীবনযাত্রায় এসেছিল অভূতপূর্ব পরিবর্তন।এই কারণেই বলা হয় তাম্রাশ্মীয় সভ্যতা।আর্যদের আক্রমণ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে হরপ্পা সভ্যতার বিনাশ ঘটে--এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।অনেকেই মনে করেন গঙ্গাপথ ধরে নাকি "উত্তর হরপ্পা সভ্যতা" ছড়িয়ে পরেছিল রাঢ় অঞ্চলে।বিষয়টা বিতর্কিত হলেও একটা কথা দিনের আলোর মত স্পষ্ট মঙ্গলকোট থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে পান্ডুরাজার ঢিবি উৎখননে প্রাপ্ত পুরা নিদর্শনে প্রমাণিত হলো--রাঢ় অঞ্চলে হরপ্পা সভ্যতার সমকালীন কৃষিকেন্দ্রিক তাম্রাশ্মীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।রেডিও কার্বণ পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত পান্ডুরাজার ঢিবিতে আদি জনবসতি গড়ে উঠেছিল খ্রিষ্ট পূর্ব ১৭০০ অব্দে।নিঃসন্দেহে আদি বাঙালীর আদি বঙ্গসংস্কৃতির সূতিকাগার।এই সভ্যতা শুধু পান্ডুরাজার ঢিবিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।অজয়-দামোদর-ময়ূরাক্ষী কোপাই-কুনুর-খড়ি নদির অববাহিকার রাঢ় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।যার দৃষ্টান্ত---বীরভূমের বাহিরি, বর্ধমান জেলার বড়োবেলুন আমারুন এবং বৃহত্তর মঙ্গলকোট ইত্যাদি। মঙ্গলকোটএ প্রাপ্ত পুরাসম্পদের রেডিও কার্বন পরীক্ষায় প্রমাণিত এখানকার আদি জনবসতি খ্রিষ্টপূর্ব ৯৪০ অব্দের।শুধু তাই নয়---তামার সঙ্গে মঙ্গলকোটবাসীরা সেই সময় থেকে লোহার ব্যবহার করতে শিখে গিয়েছিল।এইকারনেই পন্ডিতরা মঙ্গলকোট সভ্যতাকে তাম্র-লৌহ সভ্যতা বলে চিহ্নিত করেছেন।শুধু জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন নয়্--- রাঢ়ের সমাজ অর্থনীতিতে এসেছিল গভীর পরিবর্তন।
মঙ্গলকোট উৎখননে মঙ্গলকোটের অধিবাসীদের সাংস্কৃতিক জীবনধারার ক্রমবিকাশ ও অগ্রগতির মোট সাতটি স্তর ভিত্তিক বিন্যাস প্রত্নবিজ্ঞানীদ্বয় লক্ষ করেছেন।প্রথম পর্বের সময়কাল খ্রিষ্ট পূর্ব ১২০০ থেকে খ্রিষ্ট পূর্ব ৬০০ অব্দ।এই পর্বের উল্লেখযোগ্য পুরা নিদর্শন লাল-কালো কৌলাল আর্থাৎ মাটির তৈরি নানা ধরনের জিনিষ-পত্রাদি।এই পর্বের আর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের কথা আগেই বলেছি----লোহার ব্যবহার।দ্বিতীয় স্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।একদিকে তাম্রপ্রস্তর যুগের অবসান অপর দিকে আদি ঐতিহাসিক যুগের অভ্যুদয়।এরই মধ্যবর্তী সময়কাল। সময় কাল খ্রি.পূ.৬০০ অব্দ থেকে খ্রি.পূ.৩০০ অব্দ।এই পর্বে মিলেছে বেশ কিছু পোড়া মাটির নারীমূর্তি,বিডস ,হাড়ের তৈরি যন্ত্রপাতি।তৃতীয়পর্ব ঐতিহাসিক মৌর্য-শুঙ্গ যুগ।এই পর্বে লাল-কালো কৌলালের অবলুপ্তি ঘটার সাথে সাথে উত্তর ভারতীয় মসৃণ চিক্কন কৃষ্ণ কৌলালের আবির্ভাব ঘটেছে।এই সময় থেকে উত্তর ও মধ্য ভারতের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির যোগ শুরু হয়েছিল মঙ্গলকোটের। এই যোগ কুষাণ ও গুপ্তযুগে আরও নিবিড় হয়ে ওঠে। এই সময় থেকে মিলেছে সিলভার পাঞ্চ কয়েন ও ঢালাই তাম্র মুদ্রা।শুঙ্গযুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য টেরাকোটা পঞ্চচূড়া যক্ষিণী মূর্তি। মিলেছে সরকারি ও প্রাইভেট কালেক্টরদের উদ্যোগে।পাওয়া গেছে ঘোড়ায় চড়া যোদ্ধাবেশী দেবী মূর্তি।বেহালায় রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহালয়ে মঙ্গলকোট থেকে প্রাপ্ত অনুরূপ আর একটি টেরাকোটা ফলক আছে। মন্তব্য করা হয়েছে... Female divinity on horse back.Mangalkot Dt .Burdwan.3rd cent.A.D.(Treasures of The State Archaelogical Museum West Bengal plate no 10) টেরাকোটা যক্ষিণী মূর্তিগুলি বেশ অভিনব ।প্রশস্ত নিতম্ব,ক্ষীণ কটী,সমুন্নত উত্থিত পয়োধর,সুকেশী ,সর্বালঙ্কারে ভূষিতা এবং বস্ত্র পরিহিতা হলেও অনেকের যৌনাঙ্গ প্রদর্শিত---এমন দেবীই যক্ষিণী।মাথার খোঁপা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যুক্ত।খোঁপার আকৃতি চূড়া বা পাখির মতো।হেয়ার পিন দিয়ে আঁটা।হেয়ার পিনের সংখ্যা দশ বা বারোটি।পিনগুলি আকৃতিতে যুদ্ধাস্ত্র বা আয়ুধের মতো।এরা অনেক সময় অপদেবী রূপে পূজিতা হয়েছেন।শুধু হিন্দু ধর্মে নয়,যক্ষ যক্ষিণী পুজো জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মে ব্যাপক মাত্রাতে অনুপ্রবেশ করেছিল।গাঙ্গেয় বাংলার বিবিধ প্রত্নক্ষেত্র থেকে যেমন তমলুক চন্দ্রকেতুগড় আনখোনা ফরাক্কা মঙ্গলকোটে পাওয়া গেছে।আসরাফের সংগ্রহে একটি যক্ষিণীর মুখমন্ডলে আড়াআড়ি দাগ কেটে ভয়ংকরী রূপে দেখা্নো হয়েছে।
চতুর্থ পর্ব কুষাণযুগ।এই সময় থেকে মঙ্গলকোটে শুরু হয় নগরায়ণ।সর্বভারতীয় কুষাণ সভ্যতার প্রভাব পড়ে মঙ্গলকোটে।ইটের স্থাপত্য দেখা যায়।আবিস্কৃত ইটের আকার ছিল 40x27x7 সেমি। বাড়িঘরের সঙ্গে যুক্ত ছিল কুয়ো ,পয়ঃপ্রণালী।এই স্তরে আবিস্কৃত হয়েছে প্রচুর সিলমোহর,পোড়া মাটির ফলক।পঞ্চমস্তর --গুপ্তযুগ।এই সময়ে প্রচুর সিলমোহর পাওয়া গেছে।তার মধ্যে দেখা যায় নানা ধরনের প্রতীক ও চিহ্ন।যেমন বেড়ার মধ্যে গাছ,স্তূপ,পূর্ণ কুম্ভ ধ্বজা,শঙ্খ,ষাঁড় ইত্যাদি।আসরাফের সংগ্রহে প্রায় পঞ্চাশ টির অধিক সিল-মোহর রয়েছে ।যা কাটোয়া থেকে প্রকাশিত কৌলাল পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে এর বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল।আসরাফের সংগ্রহে আরও একটি মূল্যবান সিলমোহর রয়েছে ।গুপ্ত ব্রাহ্মী বর্ণে খোদিত রুদ্রদাসস্য নামাঙ্কিত শিলমোহর।এছাড়া তিন মুখো একটি বিরল শ্রেণীর শিলমোহর দেখা যায়।কোন কাজে এগুলি ব্যবহৃত হতো তা এখনো বোঝা যায়নি।নানা ধরনের পুঁতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কারনেলিয়ান আগেট স্ফটিক চ্যালসিডনি কাঁচ হাতির দাঁতের তৈরি নানান সামগ্রী।এই সময় থেকে প্রচুর পরিমাণে কপার কাস্ট মুদ্রা মেলে।ঐতিহাসিকেরা মনে করেন ছাঁচে ঢালা তাম্রমুদ্রা প্রধানত মৌর্য-শুঙ্গ-কুষাণ-গুপ্তযুগে চালু ছিল।এই মুদ্রাগুলিতে কোন লিপি নেই।নেই কোন রাজার নাম বা দেব দেবির প্রতিকৃতি।বরং তৎকালীন লোকজীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে ।মুদ্রাগুলিতে পড়েছে কৃষিভিত্তিক সমাজ জীবনের ছাপ।মুদ্রায় বেশকিছু জীব-জন্তুর প্রতিকৃতির ছাপ আছে।যেমন হাতি,ষাঁড়,ঘোড়া,সাপ, উট ইত্যাদি।
কিছু মদ্রায় রয়েছে তৎকালীন যুগে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের ছাপ বা সাংকেতিক চিহ্ন।যেমন ক্রশ চিহ্ন,স্তূপ , স্বস্তিক চিহ্ন,যজ্ঞবেদী,রেলিং দেওয়া গাছ,বা বোধি বৃক্ষ ইত্যাদি।আরও নানা ধরনের দুর্বোধ্য সাংকেতিক চিহ্ন মুদ্রাগুলিতে দেখা যায়।এর সঙ্গে অদ্ভুত মিল রয়েছে গ্রামগঞ্জে ঘরের দরজায় আঁকা সাংকেতিক চিহ্নগুলির সঙ্গে ।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মুদ্রাগুলি মাটির ছাঁচে গলিত তামা ঢেলে বানানো হতো।আসরাফ ,আয়ুব হোসেন ও বর্তমান প্রতিবেদকের সংগৃহীত মুদ্রাগুলির গড় ওজন ৩.৫৭ গ্রাম।পশ্চিমবঙ্গের নানা স্থান থেকে এই ধরনের মুদ্রা প্রচুর পাওয়া গেছে যেমন চন্দ্রকেতুগড়,বোড়াল,পোখরানা।কাটোয়ার মঙ্গলকোট ছাড়াও কপারকাস্ট কয়েন মিলেছে কেতুগ্রামের আনখোনার মাঝিডাঙ্গা থেকে। মঙ্গলকোটের গুপ্ত পরবর্তী ষষ্ঠ ও সপ্তম স্তর দুটি খুবই বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।উল্লেখযোগ্য প্রত্ন নিদর্শন তেমন মেলেনি।এরপরেও মঙ্গলকোটে উৎখনন করা হয়েছে বিক্ষিপ্ত ভাবে।
ইতিহাস মানে অতীতের স্মৃতি রোমন্থন নয়--অমোঘ শিকড়ের টান। রোমান্স বিলাসী জীবন বিমুখতা নয়-অস্তিত্বের নিবিড় বন্ধন। জীবন সংগ্রামের প্রেরণা । ইতিমধ্যে চর্যাগীতিকে উড়িয়ারা তাদের ভাষার প্রাচীন সাহিত্য নিদর্শন বলে দাবী করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা আদায় করে নিয়েছে।বাংলাভাষা তার ধ্রুপদী মর্যাদা হারাতে বসেছে।এরপর নাকি রসগোল্লারও আবিস্কারের দাবীদার উড়িয়ারা। একের পর এক অতীত ঐতিয্য আমাদের হাতছাড়া হতে চলেছে।এটাই স্বাভাবিক ।কেননা সেই হরপ্পাসভ্যতার সমকালীন বাঙালীদের আদি ঠিকানা পান্ডুরাজার ঢিবি বা মঙ্গলকোট সম্পর্কেই আমরা ঘোরতর উদাসীন।রসগোল্লা তো অনেক পরের বিষয়।বাঙালীর এই আত্মঘাতী আত্মবিস্মৃতির মানসিকতা কবে লুপ্ত হবে??
সৌজন্যঃ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
email drswapankrthakur@gmail.com
darun ... thanks for share
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDelete