ইতিহাসের প্রেক্ষিতে দাঁইহাট উচ্চ বিদ্যালয়
দাঁইহাট উচ্চ বিদ্যালয় |
বারো হাট তেরো ঘাট।এই নিয়েই বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার ইন্দ্রাণী-দাঁইহাট।গঙ্গাতীরবর্তী প্রাচীন ইন্দ্রাণী নগর।সর্বাঙ্গে জড়িয়ে আছে তার গৌরবের ইতিহাস।আবুল ফজলের আকবরনামায় উল্লিখিত সরকার সলিমানাবাদের অন্তর্গত ইন্দ্রায়িন পরগনা।এখান থেকে মোঘলসম্রাট আকবর রাজস্ব পেতেন ৫,৯২,১২০ দাম।তারও বহু আগে থেকে সর্বভারতীয় এক তীর্থক্ষেত্র রূপে সুপরিচিত।সপ্তমাতৃকার অন্যতম দেবী ইন্দ্রাণীর পীঠস্থান।এই ইন্দ্রাণী আর ইন্দ্রেশ্বরঘাটের কথা আছে কবি কৃত্তিবাসের রামায়ণে।বিপ্রদাসের মনসামঙ্গলে।মুকুন্দের চন্ডীমঙ্গলে। আর চৈতন্যজীবনী সাহিত্যে।ইন্দ্রাণীর ভূমিপুত্র কবি কাশীরাম দাস লিখেছিলেন—
ইন্দ্রাণী নামেতে দেশ পূর্বাপর স্থিতি।
বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ রায়ের সমাধিসৌধ |
ইন্দ্রাণী এক সময় বর্ধমান রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। দাঁইহাট হয়ে ওঠে তাঁদের গঙ্গাবাস।এখানকার গঙ্গার ঘাটে তাঁদের ধর্ম-কর্ম আর অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন হতো।১৭৪০ খ্রি.প্রয়াত মহারাজ কীর্তিচন্দ্র রায়ের সমাধিস্মারক ‘সমাজ-বাড়ি’ জেলার অন্যতম পুরাকীর্তি।রয়েছে রাজবাড়ির ভগ্নাংশ,কিশোর-কিশোরীর মন্দিরসহ প্রাচীন দেববিগ্রহ। গাঙ্গেয় অঞ্চল হওয়ার কারণে ধান পাট গম তৈলবীজ প্রভৃতি কৃষিজ সম্পদের প্রাচুর্য ইর্ষণীয়।নানা কুটী্রশিল্প বিশেষকরে তাঁতবস্ত্র,রেশমশিল্প,ধাতুজ তৈজসপত্রাদি,দারু এবং প্রস্তর ভাস্কর্যের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল একসময়।দক্ষিণেশ্বরের ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পূজিত ভবতারিণী বিগ্রহটি নির্মাণ করেছিলেন দাঁইহাটের ‘কলির বিশ্বকর্মা” নবীন ভাস্কর।হাট-ঘাটের এই প্রাচীন শহরের আর্থিক সমৃদ্ধিতেই সম্ভবত প্রলুব্ধ হয়ে মারাঠা লুঠেরা ভাস্কর পন্ডিত দাঁইহাটেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন।দক্ষিণবঙ্গে এক দশক ব্যাপী যে ভয়াবহ বর্গিহাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়েছিল তার কেন্দ্রস্থল এই ইন্দ্রাণী-দাঁইহাট।
আবার প্রাচীনকাল থেকে টোল-চতুস্পাঠী-মোক্তব-মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের সারস্বত সাধনার সিদ্ধি এক গৌরবজনক স্থান অধিকার করে আছে বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে।অনেকেই বলেন দ্বাদশ শতকের অমরকোষের টীকাসর্বস্ব রচয়িতা বন্দ্যঘটীয় সর্বানন্দ ইন্দ্রাণীর শিক্ষাবিদ।সিদ্ধিগ্রামের কবি কাশীরাম দাস ছাড়াও তাঁর অনুজ গদাধর দাস রচনা করেছিলেন জগন্নাথমঙ্গলকাব্য।বেড়া গ্রামের পন্ডিত গোপাল চক্রবর্তী রচনা করেছিলেন সপ্তশতী চন্ডীর উপর টীকাগ্রন্থ।উনিশশতকের দ্বিতীয়ার্ধে দাঁইহাটে পৌরসভা প্রতিষ্ঠার(১৮৬৯) পাশাপাশি স্থাপিত হয়েছিল একটি বালিকা বিদ্যালয় ও দাঁইহাট মডেল স্কুল ।বালিকাবিদ্যালয়টি কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেই মডেলস্কুল। বিবর্তনের সিড়ি ভেঙে ভেঙে্ তার বর্তমান পরিচিতি- দাঁইহাট উচ্চ বিদ্যালয়[উ.মা]।
দুই
বিদ্যালয়ের পাশে ঐতিহাসিক গড়খাত |
দাঁইহাটে আধুনিক শিক্ষার প্রদীপটি জ্বালিয়েছিলেন নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ স্বয়ং বিদ্যাসাগর মহাশয়।আর সেই দীপাধারের সলতে পাকিয়েছিলেন কাটোয়ার দুই ইতিহাসবিস্মৃত ব্যাপটিস্ট মিশনারি রেভারেন্ড জন চেম্বারলিন ও শ্রীরামপুরের উইলিয়ম কেরির পুত্র জুনিওর দ্যা কেরি।১৮০৪খ্রি.কাটোয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্যাপটিস্ট মিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন।মহকুমার বিভিন্ন জনপদসহ দাঁইহাট-দেওয়ানগঞ্জেও তাঁরা স্কুল স্থাপন করেছিলেন।এতদাঞ্চলে সংঘটিত সতীদাহ,গঙ্গায় সন্তান বিসর্জন,জীবন্ত কুষ্ঠরোগিকে পুড়িয়ে মারা,গঙ্গায় অন্তর্জলি প্রভৃতি মধ্যযুগীয় কুসংস্কারপূর্ণ প্রথাগুলির বিরুদ্ধে তাঁরা লাগাতার আন্দোলন করেছিলেন।শহর কাটোয়ায় জুনিয়ার কেরি ১৮৩৭ সালে মহকুমার প্রথম বালিকাবিদ্যালয়টি স্থাপন করেন।দাঁইহাটে প্রথম বালিকা বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছিল ১৮৫৮সালে।এই বিদ্যালয়টিরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।বিদ্যাসাগর অধ্যাপনার পাশাপাশি একসময় দক্ষিণবঙ্গের শিক্ষাপরিদর্শকের কর্মভার গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগে বর্ধমান জেলায় ২৬.0৮.১৮৫৫ থেকে২৯.১০.১৮৫৫ পর্যন্ত পাঁচটি সরকারি অর্থাৎমডেলস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেগুলি হলো জৌগ্রাম,আমাদপুর,মানকর,দাঁইহাট ও খন্ডঘোষ।কাটোয়া মহকুমায় সরকারি উদ্যোগে স্থাপিত প্রথম বিদ্যালয় এই দাঁইহাট মডেলস্কুল।যা ১৮৫৫ সালের ২৯ শে অক্টোবর বিদ্যাসাগর মহাশয় কতৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।গবেষক ড.যোগজীবন গোস্বামীর সৌজন্যে প্রাপ্ত,রাজ্যলেখ্যাগারে সংরক্ষিত একটি নথিতে দেখা যায় বিদ্যাসাগরমহাশয়ের স্বাক্ষরিত বর্ধমান জেলার পাঁচটি মডেলস্কুলের বেতনের বিল। প্রতিটি স্কুলের প্রধানশিক্ষকের বেতন ২৫ টাকা,সেকেন্ড টিচারের বেতন ২০ টাকা।সারভেন্ট ৩টাকা এবং অন্যান্য খরচ ২টা্কাসহ মোট ৫০ টাকার বিল।১৮৫৬-৫৭ সালের ডিপিয়াই রেকর্ড অনুসারে দাঁইহাট মডেলস্কুলের হিন্দু ছাত্র সংখ্যা ৯৯জন,মুসলমান ১জন এবং অন্যান্য ১ জন।সবমিলিয়ে ১০১ জন।ছাত্র উপস্থিতির হার গড়ে ৭১জন।১৮৫৬ সালে একটি সরকারি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় দাঁইহাট মডেল স্কুলে মাটিয়ারি থেকে পড়তে আস্তো ৩০ জন ছাত্র!
।must, however, mention that
nearly opposite to Metyaree, across the river,
at a place called by the people Dyhattec (in the Burdwan district), but which I
suppose must correspond with the place called DyneLat in the assistant inspector's
reports, there is a model school. Although 30 boys from Metyaree attend this
school, and it is not more than three miles off, yet as the river is dangerous at
this point in the rains, and as the parents of these children intend on that account
to withdraw them from the Dinehaut or Dyhattee school, I see no objection to
comply with the earnest prayer of the Metyaree people, who piteously complain
that " their village has 200 families of the writer caste without one good school
ইতিমধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে মহকুমার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয় স্তাপিত হয়েছিল।কাটোয়ার কাশিরামদাস বিদ্যায়তন,ওকড়সা বিদ্যালয়,কোঁয়ারপুর বিদ্যালয় যার উল্লেখ্য দৃষ্টান্ত।এগুলি ছিল সরকারি পরিদর্শনের আওতাভুক্ত মিডিল ইংরেজি ও মিডিল ভার্নাকুলার স্কুল।পিটারসনের বর্ধমান জেলা গেজিটিয়ার (১৯০৯-১০)থেকে জানাযায় সেইসময় জেলার ১৬টি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলির মধ্যে কাটোয়া মহকুমার তিনটি স্কুল ছিল যথা কাটোয়ার কাশীরামদাস বিদ্যায়তন,ওকড়সা বিদ্যালয় আর দাঁইহাট হাই ইংলিশ স্কুল।দাঁইহাট মডেলস্কুল কিভাবে দাঁইহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছিল তার পুরো ইতিহাসটা জানা যায়না।কেননা সাতের দশকে রাজনৈতিক দুস্কৃতিদের লাগানো আগুনে বিদ্যালয়ের বহু প্রাচীন নথিসহ শিক্ষকদের পেশাগত তথ্যাবলি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে এই তথ্য মেলে যে ১৮৮২ খ্রি. বিদ্যালয়টি ষষ্ঠশ্রেণি পর্যন্ত নিম্ন-ইংরেজি বিদ্যালয় রূপে পরিচিত ছিল।১৮৮৫ খ্রি.মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি পায়।১৮৮৭ খ্রি. দাঁইহাট উচ্চ বিদ্যালয় রূপে আত্মপ্রকাশ করে।১৯৫৯ খ্রি.একাদশ শ্রেণি এবং ১৯৭৬ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়।বর্তমানে গভঃস্পনসর বিদ্যালয় রূপে স্বীকৃত।
১৮৮২ থেকে ১৯১৬ খ্রি.অবধি বিদ্যালয়টি চলতো প্রাচীন কালনা-কাটোয়া রোডের পাশে। বর্তমান অশ্বিনীকুমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে।কাশিমবাজারের রাজা শিক্ষানুরাগী মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী,বর্ধমানরাজ বিজয়চাঁদ মাহাতাব,দাঁইহাটের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও বেদব্যাস পত্রিকার পৃষ্ঠপোষক রাজা হরিনারায়ণ মুখোপাধ্যায় প্রমূখদের আর্থিক সহায়তায় বর্তমান বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি নির্মিত হয় ১৯১৭ সালে।মূল ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন তদানীন্তন বর্ধমান জেলা শাসক মি.ডি.ওয়াইডো সাহেব।১৯২৮ খ্রি.বহিরাগত ছাত্রদের সুবিধার জন্য চালু হয়েছিল গৌরবদীপ্ত “স্বর্ণময়ী ছাত্রাবাস”।ছয়ের দশকে নির্মিত হয় কলা আর বাণিজ্যভবন।আটের দশকে তৈরি হয়েছিল “ঋষিকেশমিত্র শতবর্ষ স্মারককক্ষ”টি।সাতের দশকে তৎকালীন প্রধানশিক্ষক শ্রীমনোরঞ্জন ভট্টাচার্য মহাশয়ের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয় সংলগ্ন ঐতিহাসিক গড়খাতসহ ২৪ বিঘা জমি ক্রয় করা হয়েছিল।প্রসঙ্গত- শতাধিক বৎসর পূর্বে রচিত নিবারণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “কাটোয়ার ইতিহাস”থেকে জানাযায় রাজা রামমোহন রায়ের পূর্বপুরুষ নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়এর এই গড়বাটিতেই বর্তমান দাঁইহাট উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।সম্প্রতি বিদ্যালয়ের সার্ধশতবর্ষোত্তর উৎসব উদযাপিত হয়েছে সাড়ম্বরে।
তিন
এই বিদ্যালয়ের অন্যতম গৌরব তার কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য।প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষাগুরু ঐতিহাসিক কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। কালীপ্রসন্নর বিখ্যাত দুটি বই বাঙ্গলার ইতিহাস-নবাবি আমল ও মধ্যযুগে বাঙ্গলা।দেজ পাবলিসার থেকে পুনঃ মুদ্রিত হয়েছে।প্রখ্যাত চিকিৎসক ,গান্ধিবাদী কংগ্রেস নেতা তথা সমাজসেবী প্রফেসর শচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন এই বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র.১৯১০ খ্রি দাঁইহাটের নিকটবর্তী নলাহাটি গ্রামে বিখ্যাত বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে শচ্চিদানন্দের জন্ম।দাঁইহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ সালে এন্ট্রান্স পাস করার পর ফিজিওলজিতে অনার্স নিয়ে প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হন।১৯৩৫ সালে এম.বি.এ.পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।১৯৪৫ সালে ডি.এস.সি.।ডায়াবেটিস রোগের উপর তাঁর গবেষণা আনর্জাতিক মহলে সাড়া ফেলে দেয়।১৯৪২-৪৪ দুবার তিনি গ্রিফিথ মেমোরিয়াল পুরস্কার পান।১৯৫৯ সালে সর্দার প্যাটেল কলেজের বিভাগীয় প্রধান হন।তিনি ছিলেন গান্ধিবাদী নেতা।খদ্দর ও গান্ধী টুপি পরতেন।বিনা পয়সসায় চিকিৎসা করতেন স্বগ্রামসহ সন্নিহিত দরিদ্র গ্রামবাসীদের।প্রেসক্রিপসন লিখতেন বাংলায় আর কলমে ব্যবহার করতেন সবুজ কালি।
দাঁইহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৪২ সালের এডমিট ছবি...ড,প্রশান্ত কুন্ডুর সৌজন্যে |
১৯২৯ সালের সার্টিফিকেট ছবি ড.প্রশান্ত কুন্ডুর সৌজন্যে |
বর্তমানে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৬০০ জনের অধিক।পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি বয়েজ ইস্কুল।একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ছেলে মেয়ে প্রায় সমান সমান।শিক্ষক-শিক্ষিকা –শিক্ষাকর্মি –পার্শ্বশিক্ষক মিলিয়ে ৪১ জন।বর্তমান প্রধানশিক্ষক অক্লান্ত এক সমাজকর্মী।শিক্ষাদরদি।ছাত্রবৎসল ও সৃজনশীল।তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায়,শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাঠদানের আন্তরিকতায়,বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সম্মাননীয় সদস্যদের তৎপরতায় ও অভিভাবকদের সক্রিয় সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।ফলত,মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বরাবর সন্তোষজনক।উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সংস্কৃত,দর্শন,কম্পুটার,প্রভৃতি বিষয় সংযোজন করলে ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা হবে। সেইসঙ্গে বৃত্তিমূলক কোর্স চালু হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। মহকুমার প্রথম সরকারি বিদ্যালয় হিসাবে হেরিটেজ মর্যাদার স্বীকৃতি আশা করাই যেতে পারে।আশার কথা দাঁইহাটশহরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিমধ্যে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ স্বতোপ্রণোদিত হয়ে তার জমিদান করেছে।এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন মাননীয় প্রধানশিক্ষক,সংশ্লিষ্ট পরিচালনসমিতি ও দাঁইহাটের শিক্ষাপ্রিয় নাগরিকবৃন্দ।
বিদ্যালয় কতৃপক্ষ প্রতি বছর দুঃস্থ-মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের ৫-৭ শতাংশ ফিস কনশেসন দি্যে থাকেন।শতবার্ষিকী উৎসবের সময় দাতাদের প্রদত্ত অর্থের সুদ থেকে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রদের বই কেনার জন্য অর্থ সাহায্য করা হয়।এই বিদ্যালয়ে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগণ বিবিধ স্মৃতি পুরস্কার বাবদ অর্থ দান করেছেন।এই পুরস্কারের সংখ্যা ১২টি।উক্ত টাকার সুদ থেকে প্রতি তিন বৎসর অন্তর মেধাবীছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হয়।বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারটিও অমূল্য সম্পদ।পুস্তকের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার।এর মধ্যে প্রচুর দুষ্প্রাপ্য বই রয়েছে।বিদ্যালয়ের জুনিয়ার রেডক্রসের উদ্যোগে প্রতি বৎসর শিক্ষামূলক ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। বিবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিদ্যলয়পত্রিকা সম্পুট ও ষাণ্মাসিক দেওয়াল পত্রিকা পত্রপুট প্রকাশিত হয় নিয়মিত।
১৯২২ সালের এডমিট ছবি ড.প্রশান্ত কুন্ডুর সৌজন্যে |
এই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ব্লক,মহকুমা,জেলা রাজ্যস্তরে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য লাভ করে বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করে চলেছে।কুইজ প্রতিযোগিতায় ও মকপার্লামেন্টে একাধিকবার জেলা ও রাজ্যস্তরে প্রথম ও চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে।খেলাধূলার মান যথেষ্ট ভালো।জেলায় ফুটবল কবাডি প্রতিযোগিতায় কয়েকবার প্রথম স্থান অর্জন করেছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র শ্রীমান আবীরকুমার মহান্ত মোহনবাগানের জুনিয়ার ফুটবলটিমে খেলবার সুযোগ পেয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয়েছে দাঁইহাট ফুটবল আকাডেমি।এইভাবেই বিদ্যালয় এগিয়ে চলেছে বর্ণাঢ্য অতীত থেকে আরও সম্ভাবনাময় ভবিষৎএর দিকে।সাফল্যের দিগন্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে।
ছবি নিজস্ব |
No comments:
Post a Comment