Friday, May 27, 2016

SUTOY BONA NARIR VUBAN

                     

                           সুতোয় বোনা নারীর ভুবন

 

 



 পল্লির মহিলা-মহল।নিঝুম দুপুর বেলা আর মিস্টি মিস্টি সাঁজবেলাগুলো একসময় ভরে উঠতো বউ-ঝিদের সূত্রশিল্প সাধনায়।  গ্রামে গ্রামে তখন  বিজলি বাতি জ্বলে ওঠেনি। আঁধার নামলেই  রাত-ঝিঁ ঝিঁ আর  মেঠোশিয়ালের  হুক্কাহুয়া ডাক।টিভি  তখন স্বপ্ন। কম্পিউটার মোবাইল ফোনতো আরও দুঃস্বপ্ন!!ঘর-কন্নার ফাঁকে ফাঁকে সূচসুতোর পেন দিয়ে সাদাকাপড়ের জমিতে ফুটিয়ে তুলতেন  টেরা বেঁকা ভাব-সম্প্রসারণ সদৃশ টুকরো টুকরো পদ্য।কয়েকটি শোনাই আপনাদের......
                                        (  ১) পিতার ঘরে পালিত হয়ে
                                                  পরের ঘরে যেতে হয়।
                                                    ধন্য বটে নারীর জীবন
                                                   পরকে আপন করতে হয়।।

                                               (২)  সতীর দেবতা পতি                           
                                                               জীবনের সার
                                                             পূজিতে এসেছি ভবে
                                                                     চরণ তাহার।।

                                           (৩)মাভৈঃ মাভৈঃ ডাকিছে দেবতা
                                                      সাবিত্রী তোমার কিসের ভয়?
                                                   আকাশ অবনী ডাকে প্রতিধ্বনি
                                                          সতী কি কখনো বিধবা হয়?

                                          (৪) সুখের ডালে বসি ডাকিছে পাখিরে
                                              ডাকিছ কি সেই পরম পিতারে?
                                           কি বলে ডাকিস বলে দে আমারে
                                                  ডেকে  দেখি যদি পাইরে।।

                                 আবার রসালো প্রেমের পদ্য অনায়াসে স্থান পেয়েছে.........

                                                    (৫)ভালোবাসার এমনি গুণ
                                                          পানের সঙ্গে যেমন চুন
                                                         বেশি হলে পোড়ে গাল                                                   
                                                              কম হলে লাগে ঝাল।।

উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই।দেবদেবির বন্দনা ছাড়াও পতি কেন্দ্রিক ছড়া,ভালোবাসার চুটকি ছড়া,সংসার বিষয়ক ছড়াই বেশি। লেখার পর সেগুলো বাঁধিয়ে-ছাঁদিয়ে মাটির দেওয়ালে শোভা পেত।পোশাকি নাম ছিল কার্পেট।কেউ বলতো দেওয়াল-আসন।শোনা যায় কনে দেখার সময় এগুলো ভারি কাজে লাগতো।বরপক্ষের পছন্দ হলে যাকে বলে স্পেশাল মার্কস পেতেন ভাবী বধূটি।

রবীন্দ্রনাথের বৌঠান কাদম্বরী দেবীর প্রিয়কবি ছিলেন বিহারীলাল।তিনি যখন ঠাকুরবাড়িতে যেতেন তাঁর বসার আসনটিতে কাদম্বরী বুনেছিলেন সারদামঙ্গলের সেই বিখ্যাত পঙতি......

                                     হে যোগেন্দ্র! যোগাসনে
                                            ঢুলু ঢুলু দু-নয়নে
                          বিভোর বিহ্বল মনে কাঁহারে ধেয়াও?

কাদম্বরীর অকাল প্রয়াণে ব্যথিত কবি লিখেছিলেন"সাধের আসন"।বিনিসুতোর বেদনায় গাঁথা সে লিপিমালা।আজ আর সেই শিল্পও নেই......নেই সেই মনন মানসিকতা ।খুব স্বাভাবিক।হয়তো এর মধ্যে কেউ আবিস্কার করতেই পারেন এক বিশেষ সময়ের বেদনাদীর্ণ নারি ভাবনার প্রকাশ।পতিকে ঘিরে সতী হয়ে ওঠার বাসনা কালান্তরের সকালে এগুলি বাসি জঞ্জাল বৈ তো কিছু নয়।কোন কোন মাটির বাড়িতে উই পোকায় ক্ষত বিক্ষত দু একটা নমুনা মা দিদিমার স্মৃতি বলে আটকে রেখেছেন কেউ কেউ।তবু  গ্রাম বাংলার দুপুর আছে...সন্ধ্যে আছে...।এখন সেখানে ঝংক্রিত হয়  বাংলাসিরিয়ালের মেকি সুর আর সস্তা সংলাপ!! এতেই বুঁদ  হয়ে থাকেন অধিকাংশ গ্রাম্য বউ-ঝিরা।

No comments:

Post a Comment

PROTNO-SAMRAT

https://thekoulal.wordpress.com কৌলাল ওয়েবসাইটেও পড়তে পারেন।আর দেখতে পারেন মনের মতো ছবি।                                              ...