মঙ্গলকোটের জৈনমূর্তি নৈগমেশ
জৈন শিশুরক্ষক দেবতা নৈগমেশ।অর্ধেক পশু অর্ধেক মানব।মুখমন্ডল ছাগল ভেড়া কিংবা শিঙওয়ালা প্রাণীর। গ্রিক বা রোমান মূর্তির সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত।পুরুষ ও নারী উভয় মূর্তিই দেখা যায়।জৈনধর্মগ্রন্থ কল্পসূত্র ,নেমিনাথচরিত প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে নৈগমেশ আসলে ইন্দ্রের পদাতিক বাহিনীর সেনাপতি।জৈন পুরাণ অনুসারে ইন্দ্রের আদেশে নৈগমেশ ব্রাহ্মণী দেবানন্দের গর্ভ থেকে জৈন তীর্থংকর মহাবীরের ভ্রুণ ক্ষত্রিয়া ত্রিশলার গর্ভে প্রতিস্থাপিত করেন।পরবর্তীকালে জৈনধর্মে শিশুরক্ষক দেবতা বা দেবী হিসাবে নৈগমেশ পূজিত হতে থাকে।
বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের প্রত্নডাঙাগুলি উৎখননে আবিস্কৃত হয়েছে খ্রি.পূ.প্রথম সহস্রাব্দ থেকে খ্রিস্টিয় অষ্টাদশ শতক অবধি নিরবছিন্ন মানববসতির নানা প্রত্নস্মারক।এখানকার চতুর্থ স্তর থেকে কুষাণযুগের একটি নৈগমেশ মূর্তি পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়।মথুরা থেকে কুষাণযুগের একাধিক নৈগমেশ মুর্তি পাওয়া গেছে।উত্তরপ্রদেশের অহিছত্র,রাজঘাট,বিহারের বৈশালী প্রত্নস্থল থেকে প্রায় ১২ টির মতো নৈগমেশের টেরাকোটা ফলক আবিস্কৃত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন।
মঙ্গলকোটের প্রত্নস্থল থেকে লোকগবেষক ও প্রত্ন অনুসন্ধিৎসু মুহম্মদ আয়ুব হোসেন প্রায় দু ইঞ্চি লম্বা একটি মাটির সিল সংগ্রহ করেন।সিলে খোদিত মূর্তিটিকে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক মনে করেন নৈগমেশের মূর্তি। এটি দেবী্মূর্তি।বাম হাত কটি সংলগ্ন,মনে হচ্ছে ঘট জাতীয় কিছু কোমরে ধরে রেখেছেন।ডান হাত প্রসারিত।কলসি বা ঘট থেকে কিছু বস্তু ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভূমিতে।পা পর্যন্ত ঢাকা কাপড়।মুখটি ছাগল বা ভেড়ার।নিচে ব্রাহ্মী লিপিতে উৎকীর্ণ প জাতীয় অক্ষর।ভেঙে চুরে যাওয়ায় ঠিক মত পড়া যায় না। অনেকে মনে করেন জৈনধর্মাশ্রিত অবাঙালী বণিকরাই তাদের বাণিজ্যদ্রব্যে এই সিল ব্যবহার করতেন।একাধিক কারণে সিলটি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত--নৈগমশের প্রস্তর বা টেরাকোটার মূর্তি মিললেও সিলে উৎকীর্ণ এই মূর্তি ফলকটি সম্ভবত রাঢ় অঞ্চলে প্রথম দৃষ্টান্ত।দ্বিতীয়ত---রাঢ় অঞ্চলে জৈনধর্মের প্রসার ও ব্যপ্তি শুধুমাত্র মূর্তিগত সাক্ষ্য নির্ভর ছিল।মঙ্গলকোটে পাওয়া গেছে একাধিক শান্তিনাথের বিগ্রহ। পুরুলিয়া বাঁকুড়া থেকে প্রচুর জৈন মূর্তি মন্দির তথা প্রত্নস্মারক মিললেও সিলে উৎকীর্ণ কোন মূর্তি মিলেছে বলে জানা নেই।
আমার ব্লগের মুখ্য উদ্দেশ্য বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীবাঙালীদের রাঢ়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কিঞ্চিৎ অবহিত করা ।
ReplyDelete