রাখাল
যেন একখান কালো কষ্টি পাথর কোঁদানো শরীর।কোঁকরানো চুলে ধুলোর ছিটেন।কোমরে জড়ানো লাল-গামছা।হাতে পাঁচন।গোরু-ভেড়া-ছাগল-মোষ চড়ানো--তাড়ানো-ঘোরানোর জন্য তাদের শ্রীমুখ নিঃসৃত নানা শিৎকার ধ্বনি।বিচিত্র খিস্তি-খেউর মেশানো গরমাগরম বচন......ঠিকই ধরেছেন সুবোধ গোপাল বালকদের কথা আদৌ বলছি না!একেবারে অপাঙতেয় রাখাল-বাগালদের কথা!!শিক্ষা-দিক্ষা বঞ্চিত হাড়ি-বাউরি মুচি মেথর বাগদি ঘরের সদ্য কুঁড়ি হয়ে ওঠা শিশু শ্রমিকদের কথা। ঐ যে দেখছেন গনগনে মাঝ বোশেখের আগুনে খাক হয়ে যাওয়া খেতের পর খেত।ফুটি-ফাটা পুকুর।খানিকটা আধাঁর হয়ে আসা ঝিঁ ঝিঁ ডাকা বাবলার জঙ্গল।ওখানেইতো চড়ছে গবাদি পশুরদল।এদিকে বটের ছায়ায় জড়ো হয়েছে রাজ্যের রাখাল।কেউ গামছা বিছিয়ে শুয়ে।কেউ বা বিড়ি টানে আপন মনে।কেউবা জমিয়ে বলে যৌনতার গল্প।কেউবা ধরে লম্বা করে মাঠাল গানের কলি......।সে সুর মিশে যায় বোশেখের তপ্ত দুপুরের এলমেলো বাওরে।এখন অবশ্য ছবিটা বদলেছে। তবে বদল হয় নি বাংলার রাখালি সংস্কৃতি ।বড়ু চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনকাব্যটি নাকি রাখালি নাটগীতি!স্বয়ং রাখালরাজা শ্রীকৃষ্ণ। এই রূপে পূজিত হচ্ছেন বর্ধমানের অনেক গ্রামে। গোষ্ট লীলার পদাবলী গানের কুশি-লবতো এই রাখাল-বাগালেরই দল!রাখালি কালি,রাখালি ভোগ ,রাখালি পুজো গ্রামে ক্ষেত্রসমীক্ষা করলেই দেখতে পাবেন। রাখাল ফোঁটা,রাখালদের লোক খেলা । এমনকি বাংলা প্রবাদেও যেমন রাখালের হাতে শাল্গ্রামের মৃত্যু ইত্যাদি।মঙ্গলকোট অঞ্চলের ভূমি সন্তান হওয়ার কারণে অনেক গ্রামে প্রান্তিক মুসলমানদের মধ্যে পিরের রাখালি নামে এক বিচিত্র লোকানুষ্ঠানও দেখেছি।জসিমুদ্দিনের কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম আমাদের নামকরণেও রাখাল একসময় সুপার হিট!ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যাএর কথা কি আর ভোলা যায়!!!!
No comments:
Post a Comment