নবান্ন আলপনা ছবি --সুমন মন্ডল |
ভেতো বাঙালির কাছে ধান শুধু আহার্যবস্তুই নয়;অর্থনীতি থেকে শুরু করে লোক উৎসব -কৃষ্টি তথা লোকসংস্কৃতির বারো আনাই ধান কেন্দ্রিক।ফলনে পেছিয়ে পড়লে কি হবে আজও কুলীন সেই আমন ধান।আষাঢ় থেকে
পৌষমাস--আমনধানচর্যার যেন মহাকাব্যিক বিস্তৃতি। শুরু হয়েছে সেই ধান কাটার মরশুম।তাকে নিয়েই বর্ণাঢ্য নক্সি কাঁথা-- মাঠ-পাঁচালীর কথকতায় ধান্যমঙ্গল.........
অঘ্রানের মাঝামাঝি।মাঠে মাঠে বেলা কাটে সকাল হতে সন্ধে।ধান কাটার মরশুম।মুনিশে মুনিশে মাঠ ছয়লাপ।নাস্তাপানি খাওয়া দাওয়া সবই মাঠে -ঘাটে।মুর্শিদাবাদের দূর দূরান্তের গরিব-গুর্বো লোকজন। জন -মজুর খাটতে এসেছে বর্ধমান-বীরভূম-নদিয়ার গাঁ-গঞ্জে।এখানকার লোকেরা বলে বিদেশী মুনিশ। পরিযায়ী পাখির মতো দুদ্দার ভিড় করে বছরে দুবার। ধান লাগানো আর এই ধান কাটায়। রুইতে যেমন সরেস তেমনি পাই মানে লাইন খাড়া করে দ্রুত গতিতে ধান কাটতেও ওস্তাদ।কথা বলে সুরেলা গলায়।তবে ধান এঁটুতে ( আঁঠি বাঁধতে) আবার ততটাই অষ্টরম্ভা! ঢিপ দেওয়া,পালা বাঁধা-- বিঁড়ে সাজানোয় এ অঞ্চলের মুনিশরা এক একজন সহজ শিল্পী।এক পর (প্রহর) রাত থাকতে মাঠ উঠেছে জেগে।খাটো দিনের বেলা।দুপুরের আজান শুনেই কর্মবিরতি। বেলা ঢলতেই দিগন্তে কুয়াশার সঙ্গে আঁধার নামে গুটি গুটি পায়ে ।জনহীন প্রান্তরে পড়ে থাকে মাঠের সোনালি শস্য --ধান!
গ্রাম-বাঙলার মানুষের কাছে ধান শুধু আহার্য বস্তু নয়;সাক্ষাৎ লক্ষ্মী ঠাকরুন।জুতো পায়ে বা আকাছা হয়ে ধানে হাত-পা ঠেকানো একেবারেই বারণ।পৌষ মাসে রাত-বিরেতে টাকা-পয়সা ধার দেওয়া বা নেওয়া সর্বৈব নিষিদ্ধ। কিম্বা জোরে শব্দ করলে গেরস্থরা রেগে টঙ। কারণ লক্ষ্মী বড়ো পয়মন্ত শান্ত দেবী।বেশী গোলমাল হলেই তিনি টুকুস করে কেটে পড়েন।আর সেই স্থান দখল করবেন রুক্ষ কেশী অলক্ষ্মী! তখন বুঝবে খুড়ি বেলা হলে!তাছাড়া ধান -চালের সঙ্গে বঙ্গবাসীর সম্পর্ক কী আজকের?সিন্ধুসভ্যতার সমকালীন হলো আমাদের বর্ধমানের পান্ডুরাজার ঢিবি।প্রত্ন-উৎখননে সর্বনিম্ন স্তর থেকে বেরিয়ে এসেছে ধানচাষের প্রত্ন নিদর্শন।তারপর যতদিন গেছে ধানের সঙ্গে বাঙালীর মন প্রাণ মান গেছে জড়িয়ে।ধান শুধু বাঙালীকে ধনবানই করেনি; দিয়েছে সম্মান ।চাষীর কাছে ধানী জমি জোয়ান ব্যাটার সমান।আবার অর্থ থেকে পরমার্থের প্রতীক ধান।মানুষের বিয়ে থা মাঙ্গলিক কর্মে দান ধ্যানের সঙ্গে দুব্ব্যো ঘাস সহ ধান হয়ে উঠেছে আশীর্বাদের প্রধান উপকরণ।বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থান থেকে প্রাপ্ত মৌর্য আমলের এক শিলালিপি।এতে খোদিত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে গড়ে ওঠা ধান্যভান্ডারের কথা ।
মুঠ পুজো ছবি সম্পর্ক মণ্ডল |
লক্ষণ সেনের আনুলিয়া,তর্পণদিঘি,গোবিন্দপুর,শক্তিপুর তাম্রশাসনগুলির মঙ্গলাচারণ শ্লোকে গাঁথা ধান্যবন্দনার কথিকা।উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই।বোঝা যায় প্রাচীনকাল থেকেই রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ছিল ধান।আজও তার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।তাই ধানীজমি নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেললে তার পরিণাম যে ভয়ংকর -- নন্দীগ্রাম কান্ড তার জীবন্ত উদাহরণ।
বোরো ধান বাজার মাত করলে কি হবে আমনের কাছে আমলই পায় নি কোনদিন। ধান কেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি আর যাবতীয় লোকউৎসব আমনকে কেন্দ্র করেই।রামাইপন্ডিতের শূণ্যপুরাণ নাকি চর্যাপদের সমসাময়িক রচনা।এতে হরেক রকম আমনধানের কথা আছে যেমনকনকচূড়,কাঙুদ,কলমা,কসুমশালী,খিরখম্বা,গোতমপলাল,ঝিঙাশাল,সীতাশালী,লাউশালী,মুক্তাহার,মৌকলস গৃহিনীপাগল ইত্যাদি।এখন অবশ্যি সে সবের পাট নেই।আগে গোবিন্দভোগ ধানের মাঠে ভুর ভুর করে সুগন্ধ ছড়াতো হেমন্তের বাতাস।এখন সবই খরানির ধান।যেমন ফলন তেমনি অর্থকরী।তবে কুলীন সেই আমন ধানই।আষাঢ় মাসে মিগের বাত আর অম্বুবাচীর উৎসবে টানা বর্ষণে জল লেগে যায় জমিতে।নবোদ্যমে আজও হাসিম শেখ আর রামা কৈবর্তের দল অস্থি চর্মসার বলদ ও ভোঁতা হাল নিয়ে আচোট জমিতে নাঙল ঠ্যালে।মাটির তলা থেকে বেরিয়ে আসে ঘুমন্ত গেঁড়ি গুগলি শামুক।ভিড় করে সাদা বকের দল। চাষিরা আপন মনে দরাজ গলায় মাঠাল গানে ভরিয়ে দেয় বর্ষণসিক্ত আষাঢ়ের মাঠ-ঘাট......
নাগর কোথায় রইল্যা রে...
জল লেগেছে তোমার বাকুড়িতে.........।।
শাওন মাসের রিমিঝিমি বরিষণে ধান্যসুন্দরীরা গায়ে গতরে বেড়ে ওঠে।আসে তাদের নবযৌবন।ধান্যবতীরা হয়ে ওঠে গর্ভবতী।ধীরে ধীরে বিয়েন ছাড়ে।থোড় আসে।আর জমে ওঠে দুধ।আশ্বিনসংক্রান্তি হলো ধানের পূর্ণ প্রসব কাল।তারপরই পেকে ওঠার সময়।ধানিজমি যেন কৃষিলক্ষ্মীর আদিগন্ত সবুজ শাড়ি।লেগেছে তাতে সোনার পরশ।ধানের বনে হিমেল হাওয়া আর সোনা রোদের মাখামাখি,মাতামাতি।পরম তৃপ্তিতে পেকে উঠছে আগুন রঙা ধান।আশ্বিন সংক্রান্তি। আজ যে ধান্যলক্ষ্মীর পূর্ণ প্রসবের দিন।ভোরে উঠবে চাষি।নেবে সেই শরের ডাককাঠি।যেন অমোঘ এক যাদুদন্ড।আর এক গেলাস কানায় কানায় মা-গঙ্গা।শিশির ভেজা আলপথে,দুব্বো ঘাসে ঘাসে পা দিয়ে চাষি মাঠকে শোনাবে ধানের গর্ভ-বার্তাঃ' ধান ফুল......ধান ফুল............মাঠের সব ধান ফুল..।সে ডাক মাঠ থেকে মাঠে পড়বে ছড়িয়ে।এখনো যে ধান প্রসূত হয়নি,সে আসবে ধরিত্রীর গর্ভ ভেদ করে।এখনো যে ধান ফুলোই নি সে এবার হেসে উঠবে রাঙা আলোয়।জমির ঈশান কোণে গঙ্গাকে দিয়ে আসবে চাষি।নিয়ে আসবে মাঠের পানি।ডাকের জল খেয়ে মেঠো সরীসৃপরা চলে যাবে শীতঘুমে।মা লক্ষ্মী হেসে উঠবেন মাঠ আলো করে।
কার্তিক-সংক্রান্তিতে মুঠ আনা এক মজার অনুষ্ঠান।ভোরবেলায় চাষি চান করে নতুন কাপড় চোপড় পরে কাস্তে নিয়ে মাঠে হাজির।জমির ঈশাণকোনে আড়াই আলুই ধান আড়াই প্যাঁচে কেটে ছালের কাপড় জড়িয়ে মাথায় নিয়ে চুপটি করে সোজা বাড়ি।লক্ষ্মীর আটনের পাশে কলা বউর মতো রেখে দিয়ে শুরু হয় পুজো আচ্চা।পূর্ববঙ্গে ছিল ভিন্ন রীতি।বাতা গাছের পাঁচটা ডগি আর মাঙ্গলিক উপচার নিয়ে ধানি জমিতে গিয়ে বাতার ডগায় সিঁদূর মাখায়। পাঁচটা ধানের ছড়া তাতে বেঁধে নিয়ে লক্ষ্মীর সঙ্গে পুজো আরম্ভ হয়ে যায় ঘটা করে।ময়মনসিংহগীতিকার মলুয়া পালায় আছে
পাঞ্চগাছি বাতার ডুগুল হাতেতে লইয়া।
ধানের গাড়ি মাঠ থেকে ঘরমুখো |
মাঠের মাঝে যায় বিনোদ বারোমাস্যা গাহিয়া।।
অঘ্রান মাস পড়তে না পড়তে মাঠের রঙ বদলাতে শুরু করে।আগুন রঙা ধান ক্রমশ পাকা সোনায় পরিণত। উদ্ধত ঋজু ধান এবার সকল অহংকার লুপ্ত করে ফলভারে নত। শুরু হবে ধান কাটা ।তার আগেই লঘু অর্থাৎ নতুন ধান্যে হবে নবান্ন তোমার ভবনে ভবনে...।নবানে এই নতুন চালের গুড়ো আর বহু পদাবলী সমন্বিত অন্নভোগ কৃষিলক্ষ্মী ,গৃহদেবতা, দরিদ্র নারায়ণ, পাখ-পকুরি্,গৃহপালিত প্রাণী,আত্মীয় স্বজনকে খাইয়ে কর্তা গিন্নি শেষে সেই প্রসাদ গ্রহণ করেন।নবান্ন বহু পুরাতন কৃষি উৎসব।বৃহদ্ধর্মপুরাণে নবান্নের কথা আছে--
-
মার্গশীর্ষে মহাভাগে নবান্নৈঃপূজয়েদ্ধরিম।
ছন্দবদ্ধ ধান্য-পাঁচালি ছবি লেখক |
পায়সংশর্করা দুগ্ধং দদ্যাৎ কৃষ্ণায় ভক্তিতঃ।।
(উত্তরখন্ড,দশম অধ্যায়) অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন দ্বারা হরিপূজা করবে।তাঁকে ভক্তিপূর্বক দুধ ও চিনি এবং পায়স নিবেদন করবে।পরবর্তীকালে শ্রেণি ধর্ম নির্বিশেষে গ্রাম্যবাঙালির ফসল কাটার প্রাক উৎসবে পরিণত হয়। কৃষিজীবী মুসলমানদেরও বড়ো প্রিয় উৎসব এটি। গ্রাম্যবাঙালির যথার্থ সার্বজনীন লোকউৎসবের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে নবান্ন।অনেকেই আবার বলেন বৈদিক যুগে বিশেষ বিশেষ ঋতুতে যজ্ঞ সম্পন্ন হতো ।অগ্রহায়ণ মাসে 'আগ্রায়ণ ইষ্টি' নামে এক ঋতুযজ্ঞ হতো। এই যজ্ঞে সুনাশীর নামে এক কৃষি দেবতাকে বিশেষ ভোগ নিবেদন করতো।এটাই নাকি নবান্ন উৎসবের আদিম রূপ।এরপরই আমন ধান কাটা শুরু হয়ে যেত ।পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে তোরা আয়..।.এখন অবশ্য পৌষের ডাকের অপেক্ষা আর কেউ করেনা ।নবানের আগেই মাঠ ফাঁকা।গোরুর গাড়ি বদলে ট্রাক্টর নামক যন্ত্র দানবের গর্জন।ছোটখাটো ডায়নোসরের মতো ধান কাটার মেসিন। উদ্ধত থাবায় ধান্যলক্ষ্মী।বেঁটে খাটো ধানগাছের অসহায় আত্মসমপর্পণ---সব মিলিয়ে মাঠ-পাঁচালিতে ভিন্ন সুরের দোলা।
অথচ কয়েক দশক আগেও পৌষ মাস মানে এক আলাদা অনুভূতি।লক্ষ্মীমাস বলে কথা।ধীরে সুস্থে ধান কাটা ।তারপর মাঠে মাঠে ধান সাজানোর সহজ ছন্দ।দেখলে দু চোখ জুড়িয়ে যেত। মাঠতো নয়;যেন সত্যেন দত্তের ছন্দময় পদ্য।রাতে মাঠ-পাহাড়ার জন্য কুঁড়ে তৈরি করা।সেও সেই ধান দিয়ে একটা গুহার মতো বানানো।হাতে পাঁচ ব্যাটারি টর্চ লাইটের জ্বলন্ত চোখ।আর চোর প্রতিহত করার সেই মান্ধাতা আমলের লাঠি।হৈ--হৈ-----! রাত পাহাড়ার হাঁক-ডাক! সে ডাক ক্রমশ অনেক কণ্ঠস্বরে মিলিত হয়ে পৌষের নিকষকালো রাত চিঁড়ে ছড়িয়ে পড়তো মাঠ থেকে মাঠে।গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে । ধানকাটা সারা হলে গোরুর গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পালা।মাঠে মাঠে গো-গাড়ি চলাচল করার জন্য আল কেটে দিয়ে গোল পড়ে যেত।মানে গাড়ি চলাচলের সাময়িক রাস্তা। দু দিকে ধানের পালা সাজিয়ে মাঝে চাপ-বাঁশ দিয়ে এঁটে গো-গাড়ি তখন মৃদুমন্দ ছন্দে বাড়িমুখো।চাষির হাতে পাঁচন আর মুখে গরমাগরম বচন।ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ধানের শিষ কুড়োবার জন্য আসতো গাড়ির সঙ্গে ।ফিরতি পথে ধানের গাদায় বসে থাকার বাড়তি সুখ।ছেলেপুলের হাতে তখন কাঁচা পয়সা।গ্রামে গ্রামে রাতে বসতো অস্থায়ী দোকান।পাঁউরুটি সস্তার কেক, লেড়ো, গুড়বাদাম, হাতে তৈরি বিস্কু্ট, চানাচুর আর কাঁচের মার্বেল।মাঠে মাঠে পড়ে থাকা ধানের শিষ কুড়িয়ে এনে বিক্রি করা তখন দারুন ফ্যাসন।মাঠ থেকে ধান উঠে গেলে আবার ছেলেপুলের দল টাকনা কোদাল নিয়ে মাঠে ইঁদুরের গর্ত খুঁজে বেড়াত। মেঠোইঁদুররের দল সেই গর্তগুলোয় প্রচুর ধান কেটে কেটে রেখে দিত। শেষ ধান কাটা বা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় একটা ভারি মজার প্রথা ছিল।সে কথাটাই বলি।
প্রশ্ন হলো --এই দাওন শব্দটির অর্থ কী? রাঢ়ের বিশিষ্ট গবেষক ড. অমলেন্দু মিত্র মশাই অনুমান করেছেন যে সাঁওতালদের আগমনের পূর্বে নাকি সাঁওতালপরগণা অঞ্চলে দামন নামে এক পার্বত্য জনজাতি বাস করতেন।ফার্সি ভাষায় দামন মানে কিনারা।হয়তো জমির কিনারা থেকে কয়েক গুচ্ছ ধান উপড়িয়ে আনার জন্যই একে দাওন বলা হতো।অনেকেই আবার মনে করেন গ্রিক শস্যদেবী ডিমেটরের সঙ্গে দাওনের শুধু ধ্বনিগত মিল নয়;প্রকৃতিগতও মিল রয়েছে।ডিমেটর শুধু শস্যকে পরিপক্ক করেন না তিনি শস্যের পাহাড়াদার।হোমারের ওডিসি কাব্যে শস্যদেবী ডিমেটরের স্বর্ণকেশের কথা আছে যা স্পষ্টত পাকা ফসলের প্রতীক। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শস্যকাটার পর শেষ আঁটিকে দাওনের মতোই পবিত্র ভাবে বাড়ি আনা হয়।বাংলা অভিধানগুলিতে দাওন না থাকলেও দাঁও শব্দটি আছে।উৎস হিসাবে বলা হইয়েছে হিন্দী শব্দ।মনে হয় অষ্ট্রিকগোষ্ঠীর ভাষা থেকে আগত।এক অর্থে দাওন মানে কৃষীলক্ষ্মীর সস্নেহ আশীর্বাদ।চাষের ফসল মানেই অনিশ্চয়তা।সবটাই ভাগ্যে ভোগা।তাই ফসল ঘরে তোলা একধরনেরে দাঁও ছাড়া আর কি বলা যাবে?কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় সারারাত ধরে জুয়া অর্থাৎ পাশা খেলার চল ছিল।মূল উদ্দেশ্যই ছিল দাঁও মানে ভাগ্যলক্ষ্মীর কৃপা লাভ করা। সে যাইহোক--সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে মাঠ-পাঁচালির কথকতা।তবু যখন ধানকাটা বিস্তীর্ণ ফাঁকা মাঠে এসে দাঁড়াই ,মনটা বড়ো হু হু করে ওঠে।ফিরে যাই শৈশবে।সেই শীতের ঠোঁট ফাটা রুক্ষ দুপুর।ধানগাড়ীর চলালচল।হঠাৎ করে বহুরূপীর আগমন।আমরা তখন মাঠ ভেঙে ছুটে চলেছি।হাতে কুড়ানো ধানশিষের গুচ্ছ।চোখে মুখে অজানা আনন্দের উষ্ণ-উত্তেজনা ।
ঠিক যেন নিত্যকালের অপু দুর্গাদের মাঠ ভেঙে ছুটে চলা......।।
নবান্ন্ পদাবলী ছবি সম্পর্ক মন্ডল |
সৌজন্য সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত