কা-গ্রামের সাত আনার সিংহবাহিনী পুজোঃ ঘরের মেয়ে থেকে রণরঙ্গিনী দুর্গা
বাংলার জমিদারি প্রথার সঙ্গে যে দেবী ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত--নিঃসন্দেহে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। সন্দেহ নেই--বনেদি বাড়ির দুর্গোৎসবের বারোয়ানাই জমিদারি। যেমন মুর্শিদাবাদ জেলার সালার থানার কা-গ্রামের সাত আনার জমিদারবাড়ির দুর্গাপুজো। এখনো রীতিমত বিখ্যাত।জমিদারি আড়ম্বরে,জাঁকজমকে,ব্যতিক্রমী নিয়ম-নিষ্ঠায় ব্যনার্জিও চ্যাটার্জি বাড়ির এই পারিবারিকপুজো জেলাস্তরেও বহুল চর্চিত।সাবেকি আদলে গড়া এক চালির প্রতিমা সাত আনার দুর্গা। ।রথের দিন দেবীর গায়ে মাটি পড়ে।পুরুষানুক্রমে প্রতিমা গড়ে আসছেন ব্রাহ্মণশিল্পী।ডাক সাজে অলঙ্কৃত করেন পাঁচুন্দির মালাকারশিল্পীরা।
বোধনের দিন থেকেই দেবীপুজোর উদবোধন।ঘটস্থাপন করে শুভ সূচনা।সকালেই পুজো শুরু।দুপুরে চিরাচরিত অন্নভোগ।ঘরের মেয়ে উমার জন্য ঘরোয়া পদাবলি;শাক-শব্জি-ভাজা আর চাটনি।সাঁজে বাজে ঢোলের মিঠি বাদন।সঙ্গে শীতলারতি।চতুর্থিতে পুজোনির্ঘণ্টে পরিবর্তন।ঢাক ঢোল বাজিয়ে আসে চতুর্থীঠাকরুনের ঘট।ঘরের মেয়ে উমা ক্রমশ রণরঙ্গিনী দুর্গাতে পরিবর্তিত হতে থাকেন।দেবীর পাদপীঠে রাখা হয় জমিদারবাড়ির সেকেলে সব বলিদানের খড়্গ-বগি-খাঁড়া।সপ্তমী অষ্টমীতে ছাগবলির পাশাপাশি আখ কুমড়ো বলি দিয়ে দেবীকে বৃথাই তৃপ্ত করার চেষ্টা।কেননা নবমীর দুপুর থেকে দেবীপ্রাঙ্গণ যেন রক্ত ঝরা রণাঙ্গন। উদ্দাম বাজনার সঙ্গে পশুদের শেষ ব্যাকুল আর্তনাদ। ভক্তদের ভয়ার্ত কণ্ঠের মাতৃবন্দনার সঙ্গে রক্তের ফোয়ারায় বধ্যভূমি রঞ্জিত ।ছাগ ,মেষ ইত্যাদির সঙ্গে মোষ বলিতে ঘরের মেয়ে উমা তখন মহিষাসুর মর্দিনী দেবী দুর্গা। বিজয়া দশমীর প্রাতেও সাত আনার দুর্গাতলা ষোল আনা রণভূমি ।গ্রাম্যদেবী কঙ্কচন্ডীকে নিয়ে আসা হয় দেবীর কাছে।কানা খোঁড়া পাঁঠা বলি দিয়ে দেবীকে তৃপ্ত করা হয়।।দশমীর দুপুরে অপরাজিতার পুজো দিয়ে গ্রামবাসীরা দেবীর কাছে করজোরে প্রাথর্না জানায়ঃআসছে বছর আবার এসো্......।
No comments:
Post a Comment